Wednesday 5 December 2018

।। জয়দেব বাউরীর চারটি কবিতা ।।



( একটি অনুরোধ, পঙ্‌ক্তিগুলো ভেঙে যাচ্ছে মনে হলে আপনার স্মার্টফোনটি আড়াআড়ি করে পড়বেন। ল্যাপে বা ডেস্কটপে এই অসুবিধা হবে না। কবিতাগুলো কেমন লাগল? মতামত দেবেন, এইটুকু চাইছি।) 

কাব্যভাষা

ছেড়ে যাব এই প্রেম, এই কাব্যভাষা-মধুমাস
কোথাও অশান্তি নেই, নেই কোনো ভুল বোঝাবুঝি
অভ্যস্ত রতির গায়ে লেগে আছে পূর্ণিমার চাঁদ
ভেতরে কিসের ডাক? পথ ভেঙে পথ খোঁজাখুঁজি

যে আলোই এসে বসে, ম্রিয়মাণ হয়ে থাকে ঘর
তির্যক হলুদ রূপ, কবেকার শব্দমাত্রাবোধ
জড়ানো বুকের ফাঁকে ছায়া পড়ে অন্ধকার জমে
ঢোকে না তেমন আলো, কোনো ঋতু, সকালের রোদ

শ্রদ্ধাবোধ ছলোছলো, রয়েগেছে পিছুটানপথ
অনিবার্য বাঁক এসে দাঁড়িয়েছে দু-পায়ের কাছে
নতুন কালির দাগ প্রথা ভেঙে উদ্ভাসন চায়
মুগ্ধতা ও ম্লান মুখে প্রশ্নহীন খানিক তফাতে

বৈশাখ ঢুকুক বুকে, দিকচিহ্ন স্পষ্ট হোক আরো
এক মায়া পড়ে আছে; এক মায়া ডাকছে আবারো




প্রবণতা

কার কাছে রাখা আছে বিনম্র প্রেমের ভাষা, গান?
শুধুই সহজ আলো লালন করেছে নাকি কেউ!
কোনো অন্ধকার নেই আশেপাশে, তাকেও জড়িয়ে?

প্রতাপে সংশয় এলে হিংস্র করে তোলে তোমাকেও!

অস্তিত্ব, প্রসার চায় ভালোবাসা অথবা আঘাতে
প্রতিটি স্বত্তার ঘুমে শ্রেষ্ঠত্বের প্রবণতা আছে
কল্যাণ যতটা যায় অকল্যাণ যায় তার পাশে!

যেকোনো ধম্মের রোগ, জ্ঞানেরও, ভীষণ ছোঁয়াচে

সবই রয়েছে তাই যা-কিছু থাকার কথা আছে
সংযোজন আরো আরো, সংস্করণের প্রতি ধাপে
তবু রক্তকণিকারা উদভ্রান্ত, তীব্র হয়ে ওঠে
আরো এক বোধ দেখি জ্বলে থাকে পূবের আকাশে

ধ্বজার আঁধারে যত সর্বনাশ, যত পিছুটান...
গতির আলোয় বুক ততটাই হবে শুনশান?



বড়ো বেশি কথা হয়

কবিতার আড্ডা চলে, পাক খেতে থাকে কালো ধোঁয়া
খেউড়েরা উড়ে যায় সাঁঝবাতি জ্বলে দূরে-দূরে
ভালোবাসা-দ্বেষ-ক্ষোভ, রাগ-ঘৃণা গেঁজে ওঠে ক্রমে

পাতা পাতা অভিমান ঝরে পড়ে গ্রাম ও শহরে

শেষ ট্রেন চলে গেছে কবে যেন, হুঁশ নেই কারো!
প্ল্যাটফর্ম ফাঁকা, শুধু ডেকে গেল রাতচরা পাখি
আলোগুলি ম্লানহয়, ইতিউতি নিভে যায় ধীরে

শেষ ট্রেন চলে গেছে, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসে আছি...

আমাদের কথা শেষ রাত শুরু করে কথকতা
অনন্ত আকাশ জুড়ে মাখামাখি গান আর আলো
গাছে গাছে রাখা আছে অনাবিল জীবনের স্রোত...
সফলতা ব্ল্যাকহোল, ব্যর্থতাও ততটাই কালো!

ভোরটির গায়ে গায়ে শুকতারা জাগে করুণায়
বড়ো বেশি কথা হয়, ভেতরে কবিতা মরে যায়



সামর্থ্য

যে কোনো অংকের মুখে কত যে চেয়েছি ধুম জ্বর!
সমস্ত গোপন সূত্র,ভেতরের গোয়েন্দানজর
আমাকে বিমূঢ় করে নিদারুণ ব্যর্থ প্রতিবার!
আড়ালের অস্ত্রাগারে ভিজে গেছে সমস্ত বারুদ

আগ্রহ কোথায় থাকে? হৃদয়ের কতটা অতলে?
কোন বোধিমূলে, কোন সূক্ষ্মতম ফুলের ভেতর
আর কোন বনমালী হাত ধরে আলোতে নামায়?
বেলা হলে হেঁটে যায়; ডানা পায় বাতাসের মুখে

সুগন্ধি ফুলের মধু, সবুজের বেদম অভাব
কঠিন অংকের থেকে কতটা বিমুখ করে তোলে?
কেউ চায় ধুম জ্বর, ভাঙাভাঙি, সহজ অসুখ
একা ঘর ডুবুডুবু, হলুদ পাতারা এসে ধরে...

লজ্জা তো হীনের চিন্তা, বহু পরে জয়-পরাজয়
সামর্থ্য বিমুখ হলে কেউ কেউ চায় নিজক্ষয়


(কবিতাগুলো 'কবিতা আশ্রম'-এর ( মুদ্রিত) আগস্ট ২০১৮ সংখ্যায় প্রকাশিত) 

 
শিল্পী-চন্দন মিশ্র 


No comments:

Post a Comment

।। কবিতা আশ্রম ব্লগজিন ।। তৃতীয় সংখ্যা ।। ডিসেম্বর ২০১৮ ।।

শিল্পী: চন্দন মিশ্র                                                           কথা    ফের নকশিকাঁথার ভাঁজ খুলে মাঠে-মাঠে অঘ...