Wednesday 5 December 2018

।। বই উৎসব-১: ধ্যানের নিবিড় ভেঙে: পাঠক সেনগুপ্ত ।।


।। ধ্যানের নিবিড় ভেঙে ।। 
।। পাঠক সেনগুপ্ত ।।  

এসব গোপন কথা পাখি উড়ে গেলে/ বড় হয়ে ওঠে  ঢেউ তরঙ্গে তরঙ্গে/ এমনই লেখার কথা ভেবে গেলে তুমি/ সারাটা বসন্তকাল প্রণামের ছলে এইসব ছলচাতুরি, এইসব আয়োজন, সাদা পৃষ্ঠার পায়ে ঘুঙুর বাঁধার অনন্তপ্রয়াসের তুমুল স্রোত সামলে আমাদের সামান্য কবিজন্ম যতটা দিগন্তপ্রয়াসী, গোপন তারও চেয়ে বেশি। সেই গোপনের পরত খুলতে বসে কবি অভিজিৎ চক্রবর্তী পেয়ে গেছেন ভুসুকুর পদ’ (স্রোত, ঊনকোতি, ত্রিপুরা, ৪০ টাকা)। আর তারপর খুলে দেখি এসব ঝঞ্ঝার ইতিহাস/ আরো কেউ লিখে গেছে, আমার আগেই এই ইতিহাস-গোপনের সাদা পৃষ্ঠা জানে কিছুই আমার নয়, সব ধার করা মন জানে-।/ পরিণতিহীন প্রেম তবু বাড়ে গোপনে গোপনে। হেমন্তক্ষুধার এই প্রেম বুকে করে কবি এগিয়ে চলেছেন, ‘কবিতা বানাব আমি তাই মৃতদেহে প্রাণ/ এমন দ্যুতির কালে হীরাখণ্ড পাবে সমস্ত গোপনের কাছে এইভাবে জমে ওঠা বিশ্রী আবেগ সাজাতে সাজাতে সমস্ত শীতের বোঝা নামিয়ে শেষে দেখা গেল কেউ নেই। এমন জনপদের কল্পনা লিখতে লিখতে কবির নীরব ব্যাথা আগাছায়, ঘাসে জমে-জমে ওঠে। আর শীর্ণকায় সনেটগুচ্ছের বেঁধে রাখা ধ্রুবপদে এই যে চারপাশে পড়ে আছে তোমার-আমার, ‘ভাবো সে চর্যার নদী, ভুসুকুই আমি/ দুআন্তে চিখিল মাঝে ঠাঁই নেই কোনো’... পরতে-পরতে শেষে ঘন বর্ষা আসে। ভেতরে-ভেতরে ডেকে ওঠা সমাজ না-মানা পাখি অনুবাদে ভুল হয় আর দ্রুত সরে যায় দিন, দ্রুত সরে রাত’... ‘ধ্যানের নিবিড় ভেঙে প্রতিবার উড়ে যায় বক





          ভেবেছিলাম নতমুখেই পেরিয়ে যাব দুপুর’— এরকম ভেবে-ভেবেই দিন গেল। নতমুখে দাঁড়িয়েছে ধুতুরার ফুল। দেখে-শুনে মনে হয়, কবি অভিজিৎ চক্রবর্তীর মতো বলে উঠি, ‘আমিও খুলেই ফেলি পুরোনো বল্কল আজকাল ভয় ছাড়া কিছু নেই আজকাল জীবনের ভঙ্গিমা সেই একরকমই রয়ে গেল। নদীচরে হেঁটে-হেঁটে বেড়ানোর সদাজাগ্রত বিকেল পাই না আর। ভাবি, ‘কীভাবে বেদনা নিয়ে বেঁচে থাকা যাবে আর নেমে যেতে যেতে কবির উড়াল অন্তহীন’(সাতদিন, ধর্মনগর, ত্রিপুরা, ১০০ টাকা) থেকে সহজ ফুলেরা ফোটে আমাদের নিবিড় পাঠের তলে তাঁর বিকল্প-সূত্র, তাঁর দাম্পত্যের খুঁটিনাটি খুলে যত দূরে উড়ে যেতে চাই, দেখা যায়, ‘এ মোহিনীময় ওড়ান অনাদিকাল থেকে ঝরছে আর বৃষ্টির কাছে অসহায়, জল-রোদের কাছে অসহায় আমাদের সব ইচ্ছেগুলোর সামনে নিয়মিত ফুলের রঙ মিশে যাচ্ছে আলোয়, রোদের রঙ এসে মিশছে ফুলে। কেবল নিজেরটুকু ছাড়িয়ে তাকালে দেখা যাবে, ‘তখন আকাশ গেছে খুলে স্বাতী তারা/ চেয়ে আছে অন্ধকারে ঘুমে অচেতন... আমাদের বিশ্বাসের কাছে তাহলে কীসের মোহনা, ‘তেমন কোনও মোহ নেইতবু পরিণতি -/ এই বেঁচে থাকা শিল্প বলে জানি  
['কবিতা আশ্রম'-এর ডিসেম্বর ২০১৮ (মুদ্রিত) সংখ্যায় লেখাটি প্রকাশিত] 





['কবিতা আশ্রম' (মুদ্রিত)-এর আগস্ট ২০১৮ সংখ্যায় প্রকাশিত] 

No comments:

Post a Comment

।। কবিতা আশ্রম ব্লগজিন ।। তৃতীয় সংখ্যা ।। ডিসেম্বর ২০১৮ ।।

শিল্পী: চন্দন মিশ্র                                                           কথা    ফের নকশিকাঁথার ভাঁজ খুলে মাঠে-মাঠে অঘ...