Wednesday 5 December 2018

।। সবুজ ধারাবাহিক-১: কেউ: গাছবন্ধু ।।



বুনো ঝোপঝাড়-১
গাছবন্ধু 
কেউ
বৈজ্ঞানিক নাম: Celiocostus speciosus
ইংরেজি নাম: Crepe Ginger, Cane-reed, Malay ginger, Spiral flag, Spiral ginger, Wild ginger , White Costus

অভ্যেসমতো বনগ্রামের অরণ্যদেশে ঘুরে বেড়াই। একদিন পাশের বন্ধু হঠাৎ-ই খুব উল্লসিত হয়ে পড়েন,“ওই, ওই তো বুনোআদা!” আমরা থমকালাম, যেন শুনতে পেলাম, “ইউরেকা, ইউরেকা!”
আমরা এমনই। বুনোগাছ দেখলেই তাকে ছুঁয়ে দেখার বুনোইচ্ছেটা ভীষণকিন্তু বুনোআদা! সেটা আবার কী? আগে কি কখনও শুনেছি এমন কিছু? অগত্যা ঘোর অন্বেষণশেষে জানতে পারি, ওটা আসলে কেউ’, ‘কেঁউ’, ‘কেমুক’, ‘কেউমুকবা কেমূলএগুলো সবই ওর বাংলা নাম, যা আমার মতো অধিকাংশ বাঙালিই খোঁজ রাখেন নাগ্রামজনেরাও ভুলে গেছেন বড় অবহেলায়


সংস্কৃতে কেউ’-কে কেমূলা’, ‘কুষ্ঠ’, ‘কেবুকাবা কেম্বুকমবলে। অর্থাৎ ওটাই তাহলে বন্ধুর ওই উল্লাসপথের বুনোআদা’! পরে আরও জানতে পারি, এই কেউ’-ই হল ভূতচতুর্দশীর চোদ্দশাকের একটিষোড়শ শতাব্দীর রঘুনন্দনের লেখা কৃত্যতত্ত্ব’-তে পাওয়া যায় ওইসব শাকের বিবরণ:ওলং কেমুকবাস্তূকং সার্ষপং কালঞ্চ নিম্বং জয়াং।/ শালঞ্চীং হিলমোচিকাঞ্চ পটুকং শৌল্‌ফং গুড়ূচীন্তথা।।// ভণ্টাকীং সুনিষন্নকং শিবদিনে খাদন্তি যে মানবাঃ।/প্রেতত্বং ন চ যান্তি কার্ত্তিকদিনে কৃষ্ণে চ ভূতে তিথৌ।সহজেই অনুমেয়, প্রাচীনজনেরা এর প্রভূত উপকারীতা সম্পর্কে উপলব্ধি করেই চোদ্দশাক-পথ্য আমাদের উৎসব-পালনের মাঝে এনে দিয়েছিলেন।
তাহলে কী কী অসুখ সারে এই কেউশাকে? বলা ভালো, কী সারে না! এর পাতা ও মৌলকাণ্ডের উপকারিতা নিয়ে লিখতে গেলে দীর্ঘ তালিকা হয়ে যাবেকেউশাক কৃমিনাশক, হজমকারক ও ক্ষুধাবর্ধক। এর মৌলকাণ্ডের রস চটজলদি বলবৃদ্ধিকারী। জ্বর, শ্বাসকষ্ট, ত্বকের নানান অসুখ, মূত্রসংক্রান্ত বিবিধ সমস্যা, কাশি, ব্রংকাইটিস ইত্যাদি সারাতে অব্যর্থ এটি আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা ক্যান্সার-ওষুধের খোঁজ পেয়েছেন এইকেউথেকেই। অর্থাৎকেউএক মহৌষধী! ভারত, চীন, মরিশাস, মালয়দ্বীপ, অস্ট্রেলিয়া-সহ পৃথিবীর নানান দেশে কেউদেখা যায়। ভারতের বাংলা, অসম ও গোয়ায় বড় বেশি চোখে পড়ে একে। সাধারণত স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় কিংবা জলাডোবার পাশে হয়ে থাকে কেউ। এখানের কেউগুলো লম্বায় প্রায় এক থেকে আড়াই-তিন মিটার। পাতা গাঢ় সবুজ, আকারে বেশ বড় ও অর্ধবৃত্তাকার। কাণ্ডের মাথায় শরৎ থেকেই সাদা-সাদা ফুল ফোটে, থাকে হেমন্ত পর্যন্ত। সাদা ফুলের নীচে পাটালিরঙের পুষ্পমঞ্জরি দেখা যায়ফুল হলুদ কিংবা গোলাপিও হয়, তবে এখানে সেসব চোখে পড়েনি।
এইসব ঝোপাঝাড়ের দেশে তলিয়ে যেতে-যেতে দেখি অজস্র সুখরোদ ঢলে পড়ে হৃদয়উঠোনে গাছ ও মাটিকে তখন আত্মীয় মনে হয়, নিজের মনে হয় আত্মীয়ই তো। জগতের অংশ হিসেবে গাছ ও প্রাণীকুল উভয়ের আত্মীয়ই।  




No comments:

Post a Comment

।। কবিতা আশ্রম ব্লগজিন ।। তৃতীয় সংখ্যা ।। ডিসেম্বর ২০১৮ ।।

শিল্পী: চন্দন মিশ্র                                                           কথা    ফের নকশিকাঁথার ভাঁজ খুলে মাঠে-মাঠে অঘ...