কনক
মণ্ডল
জন্ম তারিখ
: ৯ জুলাই ১৯৯৪
জন্মস্থান:
গ্রাম—আসবা, জেলা ও থানা- মাগুরা (বাংলাদেশ)
রাষ্ট্রীয়
বিশ্ববিদ্যালয়ের এমএ দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্র। পাঁচ বছর বয়সে দেশত্যাগ। কিছুদিন উদ্বাস্তু পরিবারের মতো বড়রাস্তার পাশে ঘর বেঁধে বসবাস।
বর্তমান
বাসস্থান : চাঁপাবেড়িয়া, বনগাঁ, উত্তর চব্বিশ পরগনা।
কনক মণ্ডল |
( একটি অনুরোধ, পঙ্ক্তিগুলো ভেঙে যাচ্ছে মনে হলে আপনার স্মার্টফোনটি আড়াআড়ি করে পড়বেন। ল্যাপে বা ডেস্কটপে এই অসুবিধা হবে না। কবিতাগুলো কেমন লাগল? মতামত দেবেন, এইটুকু চাইছি।)
রাখাল
বাবা তো রাখালই ছিল।
আমি রাখালের ছেলে।
কতবার গরুর বাটে মুখ রেখে
নিজেকে ভেবেছি বাছুর।
রাখালবাবা আমাকে নিয়ে ছুটেছে
বাবলায় ছাওয়া অরণ্যে,
জোনাকিরাতে জেগে উঠেছি
পাহাড়ের কোলে।
তারপর...
তারপর নিজেকে পুড়িয়ে দেবে ভেবে কোনও এক ঝড়
ভেঙে দিয়েছিল
পুকুরপারের তালগাছ।
আমি দেখেছি সে আর্তনাদ।
যখন শিশু-হারানো মায়ের স্তন
যন্ত্রণায় ভরে ওঠে।
দালাল অবিচল সুরে বলে-
দৌড়াও–দৌড়াও–দৌড়াও—
ভাত খেতে গিয়ে বিষম খেয়েছি,
মন ঝাঁপিয়ে ওঠে, এই বুঝি
স্বজন ডেকেছে।
রাখালও পিঠে হাত রাখে, বলে
—'পালা'।
কীভাবে রাখাল দেশভাঙা দ্যাখে!
কীভাবে রাখাল শ্রমিক হয়!
কীভাবে ছাড়ে পাল পাল গরু
রাখালে!
বাবা তো রাখালই ছিল
আমি রাখালের ছেলে।
উৎসর্গ
কাব্য
রাগ অনুরাগে ঢুকে যাবার পর
রসের স্থান পরিবর্তন হয়।
ভাবো তোমার সাথে আমার সম্পর্ক
ঠিক এমনই
স্তন থেকে দুধ পড়ে যাবার
কালে
বধূটি খুঁজছিল তার সন্তান।
এ-বুঝি একটা দেশভাগের আভাস?
খিদে মা-কে যন্ত্রণা দিলেও
বুক চায় অন্যের খাদ্য হতে।
আর আমি সকাল থেকে লিখে যাচ্ছি
প্রেম!
চন্দ্ররাত
নিদ্রাচ্যূত আলোয় চক্ষু
অন্ধকারময়,
এমনই কোনও এক ভোরের বেলাতে
হারিয়ে গেল পাখির পালকের মতো
নিস্তেজ হওয়া তোমার গড়ে
তোলা বাড়ি।
সদ্য পুস্তকের পৃষ্ঠা উন্মোচন
শব্দে
অঙ্কন করি দাম্পত্য বাসর দেহ।
ক্ষণে-ক্ষণে মিলিয়েছ
সম্ভাবনাময়
কোনও বৃষ্টিহীন রাতে।
হয়তো সে-রাতে চাঁদও ডুবে
গেছে ধ্বংসে,
অন্ধকারও অন্ধকার নয় ঠিক,
আলো
থাকবার কোনো আশাও মজিয়ে
রাখেনি।
আমি কী পেলাম...
ব্রিজের নীচে চামচিকের মতো ঝুলে থাকা
সইবে না বলেই শিকারে বেরোনো ইচ্ছেরা
লুপ্তপ্রায় কিংবা মৃত।
আমিও পেলাম কিংবা নিজেই গড়লাম
গহীন বন, যেখানে শিকার করি না
শব্দময় খেলতে দেখি হরিণশাবক।
তৃতীয় নয়ন
আমি জানি না এ জন্মের
অস্তিত্ব —
যে চুরি আমার জীবনে বাস্তব
হয়ে আসে
তাকে আর চুরি বলেই মনে হয়
না।
বালিশ কাঁথা দিয়ে তৈরি করা
বর্ডার,
খাটের একপ্রান্ত আমার
অন্যপ্রান্ত অবুঝ ভায়ের,
সে জানেই না খেলার নিয়ম —
তাই বৃষ্টির রাতে হাত উচিয়ে
বলেছিলাম— ‘রুখ যাও, নেহিতো গুলি খাওগে’।
সে বোঝে না এমন বাস্তবতা
আমাদের তাড়া করে, ঘাড় থেকে
নামিয়ে নেয় 'দ্যাশ'।
আমি এখন শিখে নিয়েছি কীভাবে
করতে হয় প্রেম
লোক মুখের জবাব কেড়ে শুনিয়ে
দিতে হয় ‘গা-জ্বলা কথা’।
ভাই এখনও নীরব থাকে।
গোপনে এসে দুঃখ করে, কান্নায়
ফুপিয়ে ওঠে।
সান্তনা দিই না, তার থেকেও
বড় কান্না বাংলার।
ওর কানের কাছে গিয়ে বাজিয়ে
দিই বাবার মহাখোল।
খোলের শব্দে ভাই-কে সতেজ করে
আমাকে করে নিস্তব্ধ।
ভাই দেখে দেখে শিখে নিয়েছে
বাজনার বুলি।
আমি পারিনি। কোনও মতেই আমার
হয় না।
আমি খোল পর্শ করতেই মনে পড়ে
মৃত নদীর বুক চিরে একটা আস্ত
পরিবার দৌড়াচ্ছে
আর আমার নতুন জামা চুরি করে
কোনও এক দালালের বউ।
তৃতীয় নয়নকে জিজ্ঞেস করি—
‘এ জন্মের অস্তিত্ব কোথায়?’
বাঁশি
বাঁশি হাতে বেরিয়ে পড়া কাকার
এ ঘর যেন ঘরই নয়।
মাঠ পেরিয়ে আসা বাঁশির সুর
মুছে যাবার রাতে
পায়ের আঘাতে বেরিয়ে আসতে
দেখেছি
কাচা ধানের বীর্য।
কাকা সুর তোলে, সুর ওঠে
পার্সপোর্টহীন বৃদ্ধের মতো।
অনেক দুপুর পেরিয়ে যেতে
আলপথে দেখেছি সাপের খোলস।
যেন আমার আদিম আত্মীয়।
সযত্নে নিয়ে আসি বাড়ি।
বাংলাজ্বর আসে যে বাড়ি।
কেন জানি না মা পুড়িয়ে দিত
সে খোলস।
বাবার চোখে জল আসত গোপন পথে
গোপনে খেয়ে নিত নিস্তবদ্ধতার
বিষ।
কাকা বাঁশি বাজিয়ে তাড়িয়ে
যাচ্ছে সে বিষের তীব্রতা।
তবু সুর এলেবেলে সাপই হয়ে
যায়।
(কবিতা আশ্রম-এর আগস্ট ২০১৮ সংখ্যায় প্রকাশিত)
(কবিতা আশ্রম-এর আগস্ট ২০১৮ সংখ্যায় প্রকাশিত)
শিল্পী-চন্দন মিশ্র |
No comments:
Post a Comment